somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে 'র' আগ্রাসী গুপ্তচরবৃত্তির স্বরূপ সন্ধান ১

০৩ রা আগস্ট, ২০১০ ভোর ৪:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অধ্যায় - ১
এসপিওনাজ কী, কেন, কীভাবে
বাংলাদেশের প্রখ্যাত লেখক কাজী আনোয়ার হোসেন তাঁর বিখ্যাত ’মাসুদ রানা’ সিরিজ-এর ৪৭তম সংখ্যা ‘এসপিওনাজে’ গুপ্তচরবৃত্তির উপর চমৎকার একিটি বিবরণ দিয়েছেন। এসপিওনাজ জগতের অন্ধকার চোরাগলিতে নেকেই কিভাবে জেনে বা না জেনে হারিয়ে যান তা ঐ বইতে ফুটে উঠেছে এভাবে- “মোহাম্মদ ফারুক আলমগীর ঢাকার একটি দৈনিক পত্রিকার রিপোর্টার। রুচিশীল সংস্কৃতিবানের লেবাস। নিজেকে সংস্কৃতিবান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে বেশ কয়েক বছর কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে আলমগীরকে। প্রথমেই প্রমাণ করতে হয়েছে সে রবীন্দ্র সঙ্গীতের ভক্ত। পাকিস্তানী আমতেল এটা ছিল একটা বিদ্রোহের মত। ওঁর কাছে কালচারের প্রধান মানদণ্ড ছিল কে কতটা বুঁদ হতে পারে রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনে। সেই সাথে যদি গায়ে হালকা সেন্টের মত মস্কোপন্থীর গন্ধ থাকে তাহলে তো কথাই নেই; রীতিমত প্রোগ্রেসিভ.. একইভাবে বাড়তে বাড়তে কপালে সিঁদুরে টিপ আর মে*েতে চন্দনের আলপনা দেখলেই চোখ ঢুলুঢুলু হয়ে আসা অভ্যাস করেছে সে। ... ক্রমে বন্ধমূল ধারণা হয়েছে তার এ সবই হচ্ছে সত্যিকার সংস্কৃতি ও বাঙ্গালীত্বের লক্ষণ। পয়লা বৈশাখে সাতসকালে উঠে একদল ছেলে-মেয়ে একসাথে জুটে জুতসই কোন বটমূলে সদলবলে ‘এসো হে-এ-এ- বৈশাখ’ বলে হাঁক ছাড়া যেন খুবই দরকার। ... ঘঁষে-মেজে নিজেকে সে এতই সংস্তৃতিবাদন করে ফেলেছিল যে,- শেষে ঈদ, বকরিদ, শবেবরাত বা মিলাদ শরীফ তার কাছে রীতিমত রুচিহীন, মুসলমানী, কমিউনাল ব্যাপার-স্যাপার বলে মনে হয়েছে। কেন যে নিজের নামটা তার কাছে সহ্য হয়েছে, ঘেন্নার ব্যাপার বলে মনে হয়নি, বলা মুশকিল।
.........একাত্তরের গোলমালে ভেগেছিল কলকাতায়। কোন আদর্শের জন্য নয়, প্রাণভয়ে। সত্যিকার বাঙ্গালী পেয়ে খুশি হয়ে ‘দাদারা’ অনেক সুবিধে দিয়েছেন ওকে। খাওয়া-থাকার কোনই অসুবিধে ছিল না। একটু-আধটু পানাভ্যাস ছিল (দোষ হিসেবে নয়, ইসলাম ধর্মে বারণ আছে বলে বিদ্রাহ হিসেবে) সিদিক থেকেও অনুকূল হাওয়া দিয়েছেন তাঁরা, জুটিয়ে দিয়েছেন কবিতা রায়ের মত সুন্দরী বান্ধবী। অর্থাৎ শুধু টোপই নয়, বড়শি, সুতো, ফাৎনা, মায় ছিপ পর্যন্ত গিলে বসে আছে সে। আটকা পড়েছে কবিতার মায়া জা।ে
তেষট্টির রায়টে দেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে গিয়েছিল কবিতারা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফিরে এসেছে বেদখল হওয় যাওয়া সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করা যায় কি-না দেখতে। বড় ভাই অমলে আর সে। ..... ইদানীং কি যেন অল্প টের পাচ্ছে আলমগীর। কিন্তু এখনোত এতো ঘোরের মধ্যে রয়েছে যে, বললে বিশ্বাসই করবে না, এরা দু’জনেই আসলে ভারতীয় গুপ্তচর বিভাগের বিশেষ ট্রেনিং পাওয়া স্পেশাল এজেন্ট।
স্বাধীনতার পর পরই কলকাতা থেকে ঝাড়কে ঝাড় আসতে শুরু করলো রথী মহারথীরা এ দেশের শিল্প-সাহিতত্যের মানোন্নয়ন ও দিকনির্দেশের গার্জেনসূলভ মনোভাব নিয়ে...। বিশেষ কার্ড দিয়ে ভারতীয় ছবি দেখবার অনুরোধ, কবিতার মাধ্যমে কূটনীতিকের সাথে ব্যক্তিগত পরিচয়-মদ্যপান চলতে থাকেলো-এ সব। সে সাথে আরো ঘনিষ্ঠ হয়ে এলো কবিতা। নিজের অজান্তে্ি একটা দু’টো করে তথ্য দিতে শুরু কেেলা আলমগীর। পত্রিকার পলিসি, কোন মিনিস্টারের কি মনোভাব, কোন ফ্যাকশন কি ভাবেছে, নতুন কোন পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে কি-না-সবই অগ্রীম জেনে সে.. ধীরে ধীরে ওকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে দেশদ্রোহিতার দিকে। .... ওকে যে পুরোদস্তুর এজেন্টে পরিণত করবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়ে গেছে, ভাসিয়ে দেয়া হচ্ছে বানের জলে, ঠেলে দেয়া হচ্ছে এমন এক জায়গায় যেখান থেকে ফিরবার পথ নেই, ঘুণাক্ষরেও টের পেল না বেচারী।”
যদিও উপরের বর্ণনা একটি স্পাই ফিকশন এর ঘটনা ছাড়া কিছুই নয়, কিছু ‘এসপিওনাজ’ জগতের এক উজ্জ্বল বিবরণ লেখক তাঁর বইটিতে ফুটিয়ে তুলেছেন। এবার ‘এসিপিওনাজ’ সম্পর্কিত ‘একাডেমিক’ বা তথ্যগত বর্ণনা প্রসঙ্গে নি¤œলিখিত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন।
১। এসপিওনাজ কী ও কেন?
বর্তমান বিশ্বে একটি দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বা তার Potential enemy (সম্ভাব্য শত্রু) নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বা খোলামেলাভাবে (Overt) কূটনৈতিক সূত, প্রেস, রেডিও, টিভি বা জার্নাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যাদি ও এর বিশ্লিষণ করাই যথেষ্ট নয়, সে ক্ষেত্রে গোপনে বা পরোক্ষভাবে তথ্য সংগ্রহ করা একান্ত প্রয়োজন। তবে যে তথ্য জাতীয় নিরাপত্তার জন্য দরকার তা ‘Hostile' বা শত্রুভাবাপন্ন দেশ অবশ্যই নিরাপদে সংরক্ষণ করে আর সে জন্য তা সংগ্রহ করতে হয় গোপনে ও ধরা না পড়ে সম্পূর্ণ ‘জানি না’ ভান করে। এসপিওনাজকে প্রকৃতার্থে উল্লেখ করা যায় এভাবে, ‘যে গোপন/পরোক্ষ (Covert) উপায়ে কোন দেশ, সংস্থা বা ব্যক্তি তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় কোন তথ্য সংগ্রহ করে বা করার চেষ্টা করে’ তাকে এসপিওনাজ বলা যেতে পারে।
২। এসপিওনাজের প্রকৃতি
সাধারণত একটি এসপিওনাজ অপারেশন যখন ‘চুপচাপ’ ধরা না পড়ে সফল হয়, তখন তাকে সম্পূর্ণ সাফল্যজনব কলা যায়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সুপরিকল্পিত বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ারও প্রয়োজন পড়ে। সাধারণত এসপিওনাজ অপারেশন দু’ভাবে সম্পন্ন হয়। চলবে....
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×